কথাটি গত মাস কয়েক নিজ কানে বহুবার শুনতে হয়েছে কিন্তু জবাব দিতে পারিনি। সমাজের নিরীহ অবলা প্রাণি হিসেবে মুখের উপর ঠাস করে বলতে পারি না যে, এই ব্যাটা, করোনা তো তোদের জন্য এক বিশাল পুজি, চামেচামে ফটকা ব্যাবসা করো আর মাস্টার দেখলে চুলকানি জাগে?
বলে কারা? একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন। বলে ওরা, যারা এক টাকার নাপা করোনার দোহাই দিয়ে দশ টাকা লুফে নিয়েছে, দুই টাকার মাস্ক দু’শো টাকায় বিক্রি করেছে, ৫০০ টাকার পিপিই ৫০০০ টাকায় বিক্রি করেছে, দশ টাকার ভাড়ার জায়গায় নেয় ৫০ টাকা, তিন টাকার খেয়া নিচ্ছে ৮ টাকা, ২০ টাকার করল্লা বিক্রি করছে ৮০ টাকায়। ৪৫০ টাকার মাংস ৬৫০ টাকায়, জুম মিটিংয়ে নাস্তার খরচ ৭০০ টাকা, লকডাউনে ঝুঁকি নিয়ে অফিস করে বলে ঘুসের রেট দ্বিগুন করা দেশপ্রেমিক, এমন কি এক কাপ চায়ে নিয়েছে ৪ টাকার জায়গায় ৭ টাকা। ৫ কেজি ত্রাণের চাল ঘরের মেঝেতে লুকানো, তেল খাটের বক্সে নেয়া মার্চেন্ট, সবটাতেই নিয়েছে বললাম, প্রকৃতপক্ষে এই অপ আয় এখনো চলমান।
অথচ মাস্টাররা সেই বেতনেই আছে। করোনাকে পুজি করে তারা তো কোনো অপব্যাবসা করতে পারে নাই। বরং পকেটের পয়সা খরচ করে জুম ক্লাস, মিট ক্লাস, শ্রেণিকক্ষ রেখে বাড়ি বাড়ি যেতে হচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান, গ্রহণ, মূল্যায়ন, মিটিং, নানাবিধ প্রোগ্রামসহ প্রতিষ্ঠান প্রধান যিনি কাজের চেয়ে বাজাতে চায় বেশি এমন হলে অনেক প্রতিষ্ঠানে শতভাগ উপস্থিত করে ছেড়েছে। সবইতো ওই সামান্য বেতন অনুদানের টাকায়। বরং উল্টো করোনার দোহাই দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বেতনও বন্ধ রাখা হয়েছে। মাস্টাররা তো করোনাকে তোদের মত আশীর্বাদ হিসেবে পায়নি, পেয়েছে সীমাহীন অভিশাপ আর অপবাদের খড়গ হিসেবে।
৪ জন মিলে একটা বোনাস পাওয়া মাস্টার, অনুদানের ১০ শতাংশ মৃত্যুত্তোর কল্যাণে জোর করে কেটে রাখা মাস্টার, বাড়িভাড়া, মেডিকেলহীন মাস্টাররা সাদা জামা গায়ে ঘোরে এটা দেখলেই মাথায় ঠাডা পড়ে ওদের।
কারণ মাস্টাররা করোনাকে সুযোগ হিসেবে নিতে পারেনি। দু’ টাকার গৃহপালিত সার্ভিসটাও বন্ধ। তারপরও এরা ভালো আছে। স্বস্তিতে আছে। তোদের মত হাহাকারে নেই। সুতরাং বসে বসে না শুয়ে শুয়ে বেতন পাওয়া আমার অধিকার , আমার কিছু হলে, তোদের কেন জ্বলে? দোষ আসলে রাষ্ট্রের অবদমন নীতির। মাস্টারদের বেকুব করে রাখা হয়েছে মর্যাদায় যার প্রতিফলন পান বিক্রেতার মাঝেও পাওয়া যায়।