আঁখ মাড়াই স্থগিত হওয়া রংপুর চিনিকলে হবে শিল্প পার্ক। এমন খবরে হতাশার ঘোর কাটিয়ে আবারো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি গাইবান্ধার হাজার হাজার মানুষ। এমন সিদ্ধান্ত ইতিবাচক দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দ্রুত শিল্পপার্ক বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারীরা।
এর আগে আঁখ মাড়াইয়ের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করেও গত বছরের ডিসেম্বরে রংপুর চিনিকলের ডোঙ্গায় আঁখ পড়েনি। হঠাৎ করে দু:সংবাদ নিয়ে আসে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের এক চিঠি। এরপর স্থগিত হয় আঁখ মাড়াই। বন্ধ হয়ে যায় চিনিকলের চাকা।
কাজ নাই, মজুরি নাই-কানামনা ভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারী, মৌসুমি ও স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে প্রায় ৮’শ কর্মচারী। মিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে অনেকে। তবে এবার সেই হতাশার ঘোর কাটছে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের আরেক সিদ্ধান্তে।
চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু সময় নিউজকে মুঠোফোনে বলেন, আঁখ মাড়াই স্থগিত হওয়া চিনিকলগুলোর কোনটাই বন্ধ হবেনা। সরকার আঁখ মাড়াই স্থগিত করেছে। এগুলোকে নতুন করে বিনিয়োগের বেশ কিছু প্রস্তাব আছে। মিলগুলোকে লাভ জনক করে কিভাবে চালু করা যায়, সরকার ভাবছে।
চিনিসহ উপজাত দ্রব্যসহ অন্যকিছু পণ্য উৎপাদন সংযুক্ত করে কিভাবে কি করা যায় এটা নিয়ে সরকার পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যে রংপুর চিনিকল সহ আঁখ মাড়াই স্থগিত হওয়া ছয় চিনিকলে বিনিয়োগের জন্য থাইল্যান্ড, কোরিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাব গুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি এসেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
কর্পোরেশনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান আইনুল হক মুঠোফোনে সময় নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকলে সরকারী অর্থায়নে সরকার বেপজার আওতায় শিল্পপার্ক করার বিষয়ে ভাবছে।
এছাড়া সেতাবগঞ্জ, শ্যামপুর, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া ও পাবনা চিনিকলে চিনি ছাড়াও উপজাত দ্রব্য, সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট, ফুড প্রোসেসিং, ফল প্রক্রিয়াজাত, বিয়ার উৎপাদন, কৃষি ভিত্তিক শিল্প-কারখানা করার ব্যাপারে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রস্তাব আছে। আপাতত করোনার কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আসতে পারছে না, তা নাহলে এতদিনে দৃশ্যমান কিছু দেখা যেত।
এমন খবরে হতাশার ঘোর কাটিয়ে উৎফুল্ল শ্রমিকরা। গত বছরের ডিসেম্বরে আঁখ মাড়াই স্থগিত হবার পর প্রতিমুহূর্ত কাজ হারাবার শঙ্কায় থাকা শ্রমিকদের কাছে এমন খবর নবজীবনের মতোই।
রংপুর চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল বলেন, আঁখ মাড়াই স্থগিতের পর রংপুর চিনিকলের উপর নির্ভরশীল শ্রমিক, চাষি, ব্যবসায়ীসহ হাজারো মানুষের সামনে অন্ধকার নেমে এসেছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর চিনিকলে শিল্প পার্ক করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা যুগোপযোগী। কেননা শুধুমাত্র চিনি উৎপাদন করে মিলগুলোকে লাভ জনক করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, শ্রমিক কৃষকের স্বার্থে এমন ভাবনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তারা কৃতজ্ঞ।
শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, আঁখ মাড়াই স্থগিতের পর কাজ নাই মজুরী নাই-কানামনা ভিত্তিকসহ রংপুর চিনিকলের অন্তত ৮শ শ্রমিক কর্ম হারা হয়।
তিনি বলেন, শিল্প পার্ক হলে তারা নিশ্চয়ই কাজ ফিরে পাবেন। আরও অনেকের কর্মসংস্থান হবে।
সময়োপযোগী এমন সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান গাইবান্ধা-৫ সাঘাটা-ফুলছড়ি আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, শুধুমাত্র চিনি নয়, পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের বিষয়ে তিনি এর আগে বহুবার কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছেন। এবার রংপুর চিনিকলে শিল্পপার্ক ও অন্যান্য মিলগুলোকে আধুনিকায়নের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তা সময়োপযোগী এবং দ্রুত এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা দরকার।
৩৫ একর জমির উপর ১৯৫৪ সালে শুরু হয়ে ৫৭ সালে শেষ হয় রংপুর চিনিকল নির্মাণ কাজ। এছাড়াও মিলটির আবাদি জমি আছে ১ হাজার ৯৪২ একর। এরপর ৫৭-৫৮ মাড়াই মৌসুমেই শুরু হয় চিনি উৎপাদন। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কারণে ধীরে ধীরে লোকসান হতে থাকলে ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারী মিলটি বন্ধ ঘোষণা করে।
শ্রমিক-কর্মচারী ও স্থানীয়দের আন্দোলনের চাপে ২০০৬ সালে ফের চালু হয়। গাইবান্ধার একমাত্র ভারী শিল্প রংপুর চিনিকলকে আঁকড়ে এই অঞ্চলের শ্রমিক, চাষি, ব্যবসায়ীদের মতো সরকারী ছয় চিনিকলকে ঘিরে আবারও ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন বুনছেন হাজার হাজার মানুষ।