মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকা নিবন্ধনের সুযোগ গতকাল রাতে উন্মুক্ত করা হয়েছে। ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উল্লেখ্য ২৮ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত নাগরিকরা এবার টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) থেকে এক আদেশে নতুন করে শুরু হতে যাওয়া ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নিবন্ধন না করে কেউ ভ্যাকসিন নিতে পারবে না। এছাড়া কেবল ১২টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দেওয়া হবে মডার্নার ভ্যাকসিন। এর বাইরে অন্য সব জেলা ও উপজেলায় সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ করা হবে।
এর আগে ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী সাধারণ নাগরিকদের জন্য ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত থাকলেও এবার সেই বয়স কমিয়ে ৩৫ করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আবাসিক শিক্ষার্থী, বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীদের জন্যও নিবন্ধনের সুযোগ থাকছে। সব মিলিয়ে ২৮ ক্যাটাগরির নাগরিক ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন।
যে ২৮ ক্যাটাগরিতে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে:
১) ৩৫ বছরের বেশি বয়সী সাধারণ জনগোষ্ঠী। তবে নিবন্ধনকারীদের মধ্যে বেশি বয়সী থেকে ক্রমান্বয়ে কম বয়সীদের প্রাধিকার অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
২) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনা।
৩) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
৪) রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয় তথা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, বিচারিক ও প্রশাসনিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা।
৫) প্রতিরক্ষা কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ইত্যাদি বাহিনীর সদস্য। কোস্টগার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট সদস্যরাও ভ্যাকসিন পাবেন।
৬) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ, র্যাব, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপি সদস্য।
৭) কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, সেবিকা, মিডওয়াইফ, এসএসিএমও, অল্টারনেট মেডিকেল কেয়ার, হোমিওপ্যাথি, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট, ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ড বয়/আয়া, ধোপা, টিকেট ক্লার্ক, কুক-মশালচি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ফিজিওথেরাপিস্ট, অ্যাম্বুলেন্সচালক এবং অন্যান্য সরাসরি সম্পৃক্ত সেবাদানকারী।
৮) বার কাউন্সিল অনুমোদিত আইনজীবী।
৯) গণমাধ্যমকর্মী।
১০) জনসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার কর্মী।
১১) ধর্মীয় প্রতিনিধি।
১২) মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি।
১৩) জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী।
১৪) নৌ-বন্দর, রেল স্টেশন ও বিমান বন্দরে কর্মরত ব্যক্তি।
১৫) মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় আবশ্যকীয় জনসেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী।
১৬) নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব নাগরিক আগে নিবন্ধন করে একডোজ ভ্যাকসিনও পাননি, তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএস পাঠাতে হবে।
১৭) যাদের আগে এসএমএস পাঠানো হয়েছিল কিন্তু কোনো কারণে ভ্যাকসিন নিতে পারেননি, তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
১৮) অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী (জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরো অনুমোদিত ও নিবন্ধিত)।
১৯) সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী।
২০) সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস এবং সরকারি আইএইচটি-এর শিক্ষার্থী।
২১) সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী)।
২২) বিডা’র অধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্ডে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী (যেমন— পদ্মাসেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি)।
২৩) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
২৪) ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে FDMN জনগোষ্ঠী (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী)।
২৫) কৃষক ও শ্রমিক।
২৬) সৌদি আরব ও কুয়েতগামী প্রবাসী শ্রমিকদের ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়ে ভ্যাকসিনেশনের জন্য নির্ধারিত সাতটি (৭) কেন্দ্র সংরক্ষিত থাকবে। এ পর্যায়ে এসব কেন্দ্রে অন্য নিবন্ধিতরা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না। কেন্দ্র সাতটি হলো— ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল গাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
২৭) সৌদি আরব ও কুয়েত ছাড়া অন্যান্য দেশের প্রবাসী শ্রমিকেরা ফাইজার যেসব কেন্দ্রে দেওয়া হবে, সেই ৭টি নির্দিষ্ট কেন্দ্র ছাড়া অন্য কেন্দ্রে নিবন্ধন করে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।
২৮) বিদেশগামী শিক্ষার্থীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হয়ে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিনের আওতায় আসবেন।