চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে গত বুধবার বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তিদের লাশ বাড়ির সীমানার মধ্যে ও কারও বাড়ির উঠানের মধ্যে কবর দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু লাশ চুরি ঠেকাতে কবরগুলোর ওপর সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।
গত বুধবারের বজ্রপাতে মৃত সজীবের কবরের ওপর ঢালাই দেওয়ার বিষয়ে তাঁর বাবা সদর উপজেলার সূর্যনারায়ণপুর জনতারহাট গ্রামের দুরুল হোদা (৪২) স্থানীয় সাংবাদিককে বলেন, ‘বজ্রপাতে মারা যাওয়া লাশ চুরির বিষয়ে এলাকায় প্রচার আছে। এ ছাড়া আমি এ ধরনের চুরির ঘটনার সাক্ষী। আমি নিজে একজন রাজমিস্ত্রি।’
দুরুল হোদা আরও বলেন, ‘ঢাকার আশুলিয়ার সাধুপাড়ায় একটি কবরস্থানের সীমানা নির্মাণের কাজ করছিলাম চার বছর আগে। ওই সময় চারটি নতুন কবর থেকে লাশ চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে দুটি ছিল বজ্রপাতে নিহত দুজনের লাশ। এর মধ্যে কোন দুটি বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির লাশ, তা সুনির্দিষ্ট করতে না পেরে চোরেরা চারটি লাশই চুরি করে নিয়ে যায়। আমি শুনেছি, এসব লাশের হাড় নাকি কাজে লাগে এবং অনেক দামে বিক্রি হয়। তবে কী কাজে লাগে, জানি না। এ জন্য আমি নিজের ছেলের লাশ ঘরের পেছনে বাড়ির সীমানার মধ্যেই দিয়েছি এবং কবরের ওপরে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘিরে দিয়েছি। একই ঘটনায় নিহত আমার দুই ভাই শরিফুল ইসলাম ও মো. আলমের কবর বাড়ির সীমানার মধ্যে দিয়ে একই ব্যবস্থা করেছি।’
গত বুধবার বজ্রপাতে মৃত তোবজুলের ছেলে মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ির সামনে মা–বাবা, ভাই-ভাবি, বোন ও ভাগনের লাশ এক সারিতে দাফন করা হয়েছে। তাদের ছয়টি কবরের ওপরে ঢালাই দেওয়া হয়েছে গত বৃহস্পতিবারই। আজ কবরগুলোর চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। আমার ভাতিজা মো. বাবুকেও চরবাগডাঙ্গা এলাকায় বাড়ির সীমানার মধ্যে দাফন করা হয়েছে। তার কবরেও এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ বজ্রপাতে নিহত অন্যান্য স্বজনের কবরেও এমন ঢালাই দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের জৈটকাপাড়া গ্রামের বেলিয়ারা বেগম ও টিপু সুলতানের কবর দেওয়া হয়েছে বাড়ির আঙ্গিনার মধ্যেই। সেগুলোও ঢালাই দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেলিয়ারার চাচাতো ভাই মাইদুল ইসলাম ও টিপু সুলতানের চাচাতো ভাই জমির উদ্দিন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বজ্রপাতে নিহত মানুষের হাড় কাজে লাগে, এমন ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তেলিখাড়ি ঘাটে গত বুধবার দুপুরে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১২ জন।
ওই বজ্রপাতে বাবাসহ একসঙ্গে ১২ স্বজনকে হারানোর শোকে দিশেহারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বর মো. মামুন। তিনি উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জনতার হাট গ্রামের শরিফুল ইসলামের (৪২) ছেলে। সম্প্রতি তিনি বিয়ে করেন পাশের শিবগঞ্জ উপজেলায়। সেখান থেকে তাঁকে ও তাঁর নববিবাহিত স্ত্রী সুমি খাতুনকে আনতে গিয়ে তাঁর স্বজনেরাসহ ১৭ জন মারা যান।