হাসপাতাল দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না এখানে মানুষের চিকিৎসা হয়। রংপুর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ভবনের জরাজীর্ণ দশা। স্যাঁতসেঁতে দেয়াল, খসে পড়ছে পলেস্তারা। রোগীদের বিছানা অপরিচ্ছন্ন। নোংরা পরিবেশে কোনো রকমে চলছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালের পাশে পৃথক বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে পাঁচ বছর ধরে নষ্ট এক্স-রে মেশিন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদটিও তিন বছর ধরে শূন্য।
যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসার জন্য রংপুর নগরের তাজহাটে ১৯৬৫ সালে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়। একতলা একটি ভবনের পাঁচটি কক্ষে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। এর মধ্যে একটি নারী ও দুটি পুরুষ ওয়ার্ড রয়েছে। তিনটি কক্ষে চিকিৎসক, কর্মচারীদের বসার ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলে।
হাসপাতাল ও ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, ২০ শয্যার এই হাসপাতালে চারটি নারী ও ১৬টি পুরুষ শয্যা রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে দুজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনজন নার্সসহ ১০ কর্মচারী আছেন। একই সঙ্গে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে পৃথকভাবে ১ জন চিকিৎসক ও ৯ জন কর্মচারী রয়েছেন। ক্লিনিকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদটি তিন বছর ধরে শূন্য।
গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের যত্রতত্র পড়ে আছে রোগীদের শয্যাগুলো। শৌচাগারও ব্যবহারের অনুপযোগী। স্যাঁতসেঁতে দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। মরিচা পড়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে প্রয়োজনীয় আসবাব। মাঠে থাকা নলকূপটিও নষ্ট। হাসপাতালের এমন দুরবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা কেউ ভর্তি হতে চান না।
বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে গতকাল ১০-১৫ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। তাঁদের একজন নগরের মাহিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘অ্যাটে (এখানে) প্রায় আসি। ডাক্তার দেখাই। কিন্তু এক্স-রে মেশিনটি খারাপ থাকায় বাইরে থাকি করা লাগে। তাতে করি হামার গরিব মানুষের কষ্ট হয়।’
অন্য এক রোগী নগরের তামপাট এলাকার বাসিন্দা জয়নাল মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালের যে অবস্থা, তাতে হামার বাড়ি ভালো। তাই ওষুধ নিয়া চলি যাই।’
ক্লিনিকের অফিস সহকারী রুহুল আমিন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট। শিগগির একটি ডিজিটাল মেশিন স্থাপন করা হবে।
বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার মেশকাতুল আবেদ জানান, এখানে প্রতিদিন ৩০-৪০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। ভর্তির জন্য রোগী এলে হাসপাতালের এই অবস্থা দেখে আর থাকতে চান না। ওষুধ নিয়ে বাসায় চলে যান। রংপুর বিভাগে এটি একমাত্র যক্ষ্মা হাসপাতাল। তাই এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ যক্ষ্মা হাসপাতাল নির্মাণ হওয়া প্রয়োজন।
জেলা সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমার রায় জানান, হাসপাতাল ভবনটি অনেক পুরোনো। এ কারণে জীর্ণদশা হয়েছে। ভবনটির সংস্কারকাজ ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। শূন্য কনসালট্যান্ট পদটি পূরণের জন্য ঢাকায় জানানো হয়েছে।