কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মাদারগঞ্জ বাজার থেকে রঘুরভিটা পর্যন্ত ভাঙছে

গঙ্গাধর নদী ভারতের আসাম প্রদেশের ধুরড়ী জেলার গোলকগঞ্জ থানার পাটমারি দিয়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর নারায়ণপুর ইউনিয়নের বালাহাট দিয়ে বল্লভেরখাস ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদটি খরস্রোতা হওয়ায় ভাঙনও প্রবল। এতে কৃষ্ণপুর মৌজার ৭ এবং ৮ ওয়ার্ডের ৫টি গ্রামে ভাঙন ধরেছে। গ্রামগুলো হচ্ছে কালাডাঙ্গা, ব্যাপারী পাড়া, রঘুরভিটা, জেলে পাড়া ও রামদত্ত। গত এক মাসে ভাঙনে ৫৫টি পরিবার বসতভিটা ও প্রায় কয়েক শ একর ফসলি জমি হারিয়েছে।

ভাঙনের মুখে পড়েছে রঘুরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন, কাঁচা–পাকা সড়ক, চারটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা ও একটি মন্দির। নদী থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র এক শ ফুট। এ ছাড়া দুই শতাধিক বাড়ি ও কয়েক হাজার একর ফসলি জমি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

রঘুরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজেল আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯০৩ সালে। প্রাচীন বিদ্যাপীঠ। এটি ঐতিহাসিক। আমরা কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি নদী এত কাছে আসবে। খুব চিন্তায় পড়েছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা নুর হোসেন, আব্দুল জলিল, ইয়াসিন আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এলাকাগুলো বিলীন হতে চলেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।ইতিমধ্যে বসতভিটা হারিয়েছে জেলেপাড়ার কুটু চন্দ্র, নিখিল চন্দ্র, ভানু চন্দ্রসহ ২০টি পরিবার। বর্তমানে তারা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে আছে। স্থানীয় খগেন চন্দ্র বলেন, ‘আমরা অন্যের জায়গায় কোনো রকমে এসে মাথা গুঁজে আছি। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। বাড়ির ভিটা ছাড়া এক সুতা জমিও নাই। বড় ভাবনায় পড়েছি। ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় যাব।’

বল্লভেরখাস ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন অভিযোগ করেন, সময়মতো কাজ না করার কারণে এলাকাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

আমাদের আপডেট জানতে ফলো করুন: ক্লিক করুন

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মাদারগঞ্জ বাজার থেকে রঘুরভিটা পর্যন্ত ভাঙছে। গঙ্গাধর একটি সীমান্ত নদী। ইতিমধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার ভেতরে সীমান্ত নদ–নদীর উন্নয়ন ও সংস্কারে ৭৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু সীমান্ত নদ–নদী, তাই দুই দেশের মতামতের প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া এখানে ২০১৭ সালের বন্যার সময় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। ২০১৮ সালে টেন্ডার করা হয়। ৮৬০ মিটার তীর রক্ষার কাজ পায় ঢাকার ডলি কনস্ট্রাকশন। এ প্রতিষ্ঠান ৫ শতাংশ কাজ করে চলে যায়। আর আসেনি। পরে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। সে কারণে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার মজিবর রহমান বলেন

‘আছিলাম গেরস্ত। এ্যালা নিঃস্ব। নদীই সউগ শ্যাষ করিল। এ্যালা পরিবার নিয়া কোটে যাই। কী করমো বুঝবার পারছি না।’ ঘর ভেঙে নিয়ে যাওয়ার সময় কথাগুলো বলছিলেন মো. কলেপ উদ্দিন। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নদ–নদীতে বিচ্ছিন্ন দুর্গম বল্লভেরখাস ইউনিয়নের রঘুরভিটা গ্রামে।

আমাদের খবর ভিডিও আকারে পেতে সাবস্কাইব করুন: ক্লিক করুন

কলেপ উদ্দিন জানান, ১৯১৭ সালে সেখানে প্রথম ভাঙন শুরু হয়। ২০১৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যাদেশ দেয়। ঠিকাদার কয়েক দিন কাজ করে চলে যান। আর আসেননি। তখন থেকে ভাঙছে। তাঁর জায়গাজমি সব নদীতে গেছে। শুধু বাড়ির ভিটাটুকু ছিল, সেটারও শেষ রক্ষা হলো না।

পোষ্টটি লিখেছেন: admin

এই ব্লগে 152 টি পোষ্ট লিখেছেন .

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *