ইদানিং বেশ জনপ্রিয় অনলাইন ইনকাম। উঠতি বয়সের যুবকরা এর মাধ্যমে আয় করছেন। প্রয়োজনে অনলাইনে ইনভেস্ট বা অর্থ লগ্নি করছেন। আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা ঘরে বসেই একটি স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করে অনলাইনে আয় করছেন। তবে এই প্লার্টফর্মে কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সবারই আয়ের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে পারদর্শীদের আয় করার অফুরন্ত সুযোগ। অনলাইনে আয় নিয়ে যেমন পজিটিভ ব্যাখ্যা রয়েছে তেমনি রয়েছে এর নেগেটিভ ব্যাখ্যাও। অনেকেই এটাকে জুয়া খেলার পর্যায়ে মন্তব্য করেন।

আজকের আলোচনায় অনলাইনে আয়ের সেই দিকগুলোই তুলে ধরতে চাই। যেখানে খাদের কিনারায় উঠতি বয়সীরা দাঁড়িয়ে। জীবনের শুরুতেই ধাক্কা খেলে পাল্টে যাবে তাঁদের জীবন। অনলাইনে আয়ের জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রিল্যান্সিং, ব্লগিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, লোগো ডিজাইন, ইমেইল মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, সার্ভে, আর্টিকেল লেখা, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ছাড়াও আরো অনেক কিছু। এগুলোতে ব্যক্তি তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আয় করে থাকেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া সম্পৃক্ত বেশ কিছু লিংক রয়েছে যেখানে স্মার্ট মোবাইল পরিচালনার দক্ষতা থাকলেই যে কোনো কিশোর, যুবক আয় করতে পারছেন।

আরও পড়ুন :  গোবিন্দগঞ্জে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

এমন কিছু লিংক বা সাইটে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সবাই। হাজার থেকে লাখ টাকা করছেন ইনভেস্ট। দুই, পাঁচ, দশ ও ত্রিশটা বিজ্ঞাপন বা ভিডিও সময়ক্রমে ১০ সেকেন্ড বা ওয়ান ক্লিকে প্রতিদিন ত্রিশ থেকে পাঁচশ’ টাকা আয় করছেন। পক্ষান্তরে অনেকেই লাখ টাকা হারাচ্ছেন। অর্থ লগ্নি করে দাঁড়িয়ে আছেন খাদের কিনারায়। সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলাজুড়ে কিশোর-যুবকদের মোবাইল ফোনে ক্লিক বা ভিডিও দেখে অর্থ আয়টা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় হাজার হাজার নতুন নতুন আইডি খুলছেন তাঁরা। একেকটি আইডি খুলতে ধরন ভেদে ৭শ’, ১২২৫ থেকে শুরু করে ১৫ হাজার, ২০ হাজার, ২২ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার এমন একজনের খোঁজ পাওয়া গেছে, যে কিনা ১২২৫ টাকা মূল্যের ১৮০টি আইডি খুলেছেন। প্রতিটি আইডিতে আসা ৬টি বিজ্ঞাপন বা ভিডিওতে ক্লিক করে বা ১০ সেকেন্ড সময় দেখে প্রতিদিন ৩০ টাকা আয় করছেন। তাঁর দিনে ইনকাম ৫ হাজার ৪০০ টাকা; যা মাসের হিসেবে ১ লাখ ৬২ হাজার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ১৮০টি আইডি খুলেছেন ২ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকায়। যেখানে এক মাস চালু থাকলেই তার টাকা ওঠা বাকি থাকে ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা। যদি তার আইডিগুলো দুই মাস চালু থাকে তবে সে লাভ করবে ১ লাখ ৪ হাজার।

এমন যখন অবস্থা তখন কথা হয় এমন আইডির একাধিক এজেন্ট ব্যক্তির সাথে। তিনি উল্লেখিত বর্ণনা দিলেও দেননি আইডির নিরাপত্তা বা কতদিন এই আইডি চালু থাকবে তার গ্যারান্টি। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিদেশি আইডি পাশাপাশি আমাদের দেশীয় আইডিও রয়েছে। যতদিন চালু থাকবে ততদিন টাকা পাবেন। সার্ভারে লিংকটি না থাকলে আমার করার কিছু নেই। তিনি আরও জানান, যাঁরা আইডি খুলেছেন, সবাই টাকা পাচ্ছেন। এটা শেষ হলে নতুন নামের কোনো আইডি আবারো খুলতে হবে। প্রশ্ন জাগে বন্ধ হওয়ার শেষ দিনে যাঁরা একাউন্ট বা আইডি খুলেছেন তাদের অবস্থা কী হবে? তার বর্ণনা কে দিবে? সম্প্রতি গোবিন্দগঞ্জে অনলাইনে আয়ের বেশকিছু লিঙ্ক বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁদের নিজস্ব এজেন্টও রয়েছে এ উপজেলায়। তাঁরাই মূলত উৎসাহ দিচ্ছেন কিশোর-যুবকদের।

 

এমন লিংকে আইডি ব্যবহারকারী একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, উপজেলায় Angam shop (অ্যানজাম শপ), SPC world express (এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস), 2like (২লাইক), RingID (রিং আইডি), Indelina (ইনডিলিনা), eShope India (ইশপ ইন্ডিয়া), eShope India (ইইশপ অনলাইন),
Like HMP world express (লাইক এইচ এম পি ওয়াল্ড একপ্রেস অ্যাপ) চালু রয়েছে। এদের মধ্যে শুধু 2like (২লাইক) সাইটটি সার্ভারের সমস্যার কারণে খোঁজ মিলছে না। এছাড়া eShope India (ইশপ ইন্ডিয়া) , Insafe Saven নাকি বন্ধ রয়েছে।

 

আর কয়েকটি বিভিন্ন মামলায় বিচারাধীন রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে এমন অসংখ্য লিংক। যে যেমন ভাবে পারছে নতুন নতুন আইডি খুলে হায়-হায় কোম্পানির অবস্থা দাঁড় করিয়েছে। যেখানে একটি আইডির কোনো নিরাপত্তা নেই, নেই আইডির নির্দিষ্ট সময়-সীমা। সেখানে উঠতি বয়সীদের আইডি খুলে টাকা কামানোর বিষয়টি বেশ ভাবনার। এগুলো দেখবে কে? লেখার শুরুতেই আয়ের যে অনলাইন বিভাগগুলো দেখানো হয়েছে সেখানে কোনো অর্থ লগ্নির বিষয় নেই। আয়ের সুযোগ রয়েছে। শেষের দিকে যে নামগুলো তুলে ধরা হয়েছে সেখানে অর্থ লগ্নি করছে কিশোর ও উঠতি বয়সের যুবকরা। এজন্য তাঁরা পরিবারের কাছে টাকা সংগ্রহে চাপ দিচ্ছে।

আমাদের আপডেট জানতে ফলো করুন: ক্লিক করুন

আমাদের খবর ভিডিও আকারে পেতে সাবস্কাইব করুন: ক্লিক করুন

একসময় আমাদের দেশে ‘যুবক’, ‘এলএমএন’ ও ডেসটিনি ছিল, ছিল আরও অনেক নাম। যেগুলোর করুণ পরিণতি আমরা দেখেছি। সম্প্রতি ফেসবুক ও ইউটিউবে একটি মোনাজাত ভাইরাল হয়েছে। যেখানে মোনাজাতকারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছেন, ‘মাবুদ আমি গরু বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে আইডি খুলেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই আইডিতে সমস্যা হয়েছে। কোনো উপায় দেখছি না। কেউ বলছে সার্ভারের সমস্যা, কেউ বলছে ওপারের সমস্যা, মাবুদগো তুমি আমার আইডিটা খুলে দাও।’ পরিশেষে বলা যায়, কেউ কেউ আইডির নির্দিষ্ট মেয়াদ দিচ্ছে। টাকা উঠানোর গ্যারান্টি দিচ্ছে। কিন্তু সে নিজেও জানে না এই আইডির ভবিষ্যত কী? এরা নামে বে-নামে এমন লিংক ওপেন করে উঠতি বয়সের কিশোরদের খাদের কিনারায় নিয়ে যাচ্ছে। বলব নিজের যোগ্যতায় অনলাইনে কাজ খুজুন। পাশাপাশি কিশোর-যুবকদের খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সজাগ দৃষ্টি ও ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন এমন প্রত্যাশা সকলের।

পোষ্টটি লিখেছেন: admin

এই ব্লগে 152 টি পোষ্ট লিখেছেন .

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *